বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১০ মাস বন্ধ জ্বালানি তেল শোধনাগার

  •    
  • ১২ জুলাই, ২০২১ ১৩:০১

আরপিজিসিএলের আওতাধীন কৈলাশটিলা এলপিজি প্ল্যান্টের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আলী আল জাহিদ বলেন, ‘প্ল্যান্ট চালুর প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, শিগগিরই আবার চালু হবে।’ তবে সেটি কবে, তা তিনি জানেন না। 

বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মান অনুসরণ করতে না পারায় ১০ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সিলেটের ছয়টি সরকারি জ্বালানি তেল শোধনাগার। এখন গ্যাসের উপজাত (কনডেনসেট) থেকে জ্বালানি তেল পরিশোধন করা হচ্ছে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।

পেট্রলের মান পুনর্নির্ধারণ করে গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এতে পেট্রলের মান নিয়ন্ত্রক রিসার্চ অকটেন নম্বর ৮৯ (আরওএন) করা হয়। সেই সঙ্গে এ গুণমান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) গত বছরের জুনে চিঠি দেয় সংস্থাটি।

এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও পেট্রলের মান উন্নয়ন করতে পারেনি বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন ১১টি পরিশোধনাগার। উল্টো পরিশোধনাগারগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পেট্রলের মান আগের আরওএন ৮০-তে ফিরিয়ে নিতে এই বছরের শুরুর দিকে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বিএসটিআই।

এসব চিঠি চালাচালিতে কোনো সমাধানে পৌঁছতে না পারায় এখনও বন্ধ রয়েছে রাষ্ট্রীয় তেল শোধনাগারগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের সঙ্গে উপজাত হিসেবে প্রচুর পরিমাণে কনডেনসেট পাওয়া যায়। সিলেটের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শোধনাগারগুলোতে পরিশোধন করে এই কনডেনসেট থেকে পেট্রল, ডিজেল ও অকটেন উৎপাদন করা হতো।

এর মধ্যে প্রতিদিন গোলাপগঞ্জের রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) দুটি প্ল্যান্ট থেকে ৮০০ ও ৫০০ ব্যারেল, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের আওতাধীন হরিপুরে ৬০ ব্যারেল, কৈলাশটিলায় ৩০০ ব্যারেল এবং রশিদপুরের দুটি প্ল্যান্টে ৩৭৫০ ও ৪০০০ ব্যারেল পেট্রল, ডিজেল ও এলপিজি উৎপাদন হতো।

এগুলো সবই বন্ধ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে। এতে এই অঞ্চলে দেখা দেয় জ্বালানিসংকট।

এই সময়ে চট্টগ্রাম ও ঘোড়াশালের কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উপজাত থেকে জ্বালানি তেল রূপান্তর করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে রেলের ওয়াগনে করে তেল নিয়ে এসে সিলেটের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছিল না। গত বছর শেষের দিকে ওয়াগনসংকট ও তেলবাহী ট্রেনের ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণে ব্যাহত হয় তেল পরিবহন।

এ অবস্থায় গত জানুয়ারিতে সিলেট বিভাগজুড়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেন জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা। এরপর গত ১০ মার্চ সিলেট আসেন বিপিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক। তিনি মানজনিত সমস্যা সমাধান করে দুই মাসের মধ্যে সিলেটের সব কটি শোধনাগার ফের চালুর আশ্বাস দেন।

এই আশ্বাসেরও চার মাস পেরিয়ে গেছে; চালু হয়নি ৬ প্ল্যান্ট।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটার্স এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, মানসম্পন্ন জ্বালানি তেল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না এমন অজুহাতে রাষ্ট্রীয় শোধনাগারগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত জ্বালানি তেলের মান আরও খারাপ। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ষড়যন্ত্র থেকেই সিলেটের শোধনাগারগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।

সিলেটের জ্বালানি ব্যবসায়ীরা জানান, শুষ্ক মৌসুমে সিলেট বিভাগের ১১৪টি পাম্পে পেট্রল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতিদিনের চাহিদা থাকে প্রায় ৩০ লাখ লিটার। বর্ষা মৌসুমে এই চাহিদা কমে ১০ লাখ লিটারে দাঁড়ায়। বর্তমানে চাহিদা কম থাকায় সংকট না থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে সিলেটে মারাত্মক জ্বালানিসংকট দেখা দেয়। তখন চট্টগ্রাম থেকে রেলের ওয়াগনে করে তেল এনে সিলেট বিভাগের চাহিদা পূরণ সম্ভব হয় না।

রাষ্ট্রীয় শোধনাগারগুলো চালু না হওয়ার কারণ জানতে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের লিক্যুইড পেট্রোলিয়াম মার্কেটিং ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বিশ্বাসের কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে গত ১ অক্টোবর থেকে প্ল্যান্ট পুরো বন্ধ আছে জানিয়ে আরপিজিসিএলের আওতাধীন কৈলাশটিলা এলপিজি প্ল্যান্টের উপমহাব্যবস্থাক (ডিজিএম) আলী আল জাহিদ বলেন, প্ল্যান্ট চালুর প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, শিগগিরই আবার চালু হবে। তবে সেটি কবে, তা তিনি জানেন না।

সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, তাদের চারটি পরিশোধনাগার বন্ধ রয়েছে। এগুলো বন্ধ থাকায় গ্যাস ফিল্ডের আওতাধীন গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে পাওয়া উপজাত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। প্রতি লিটার উপজাত ৩৮ দশমিক ৯৭০ টাকায় বিক্রি করা হয় বলে জানান তারা।

এই প্রতিষ্ঠানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সিলেটের রশিদপুরে প্রতিদিন ১৫০০ ব্যারেল পেট্রল অকটেনে রূপান্তর ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যাটালাইটিক রিফরমিং ইউনিট (সিআরইউ) ও ৫০০০ ব্যারেল রূপান্তর ক্ষমতাসম্পন্ন সিআরইউযুক্ত ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে। চলতি বছরই এগুলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে।’

তিনি জানান, আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এসব প্ল্যান্ট চালু হলে এগুলো থেকে সরবরাহকৃত জ্বালানি তেলের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না।

এ বিভাগের আরো খবর